২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এখনো মুখর বিনোদনকেন্দ্রগুলো

-

প্রিয়জনের সাথে ঈদের ছুটি কাটাতে রাজধানীবাসী ফেরেন গ্রামের বাড়িতে। তাই এ সময় অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকা, থাকে না যানজট, মানুষের হুড়োহুড়িও চোখে পড়ে না। সর্বত্রই থাকে ছুটির আমেজ। ছুটি থাকায় ভিড় বাড়ে শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। এবারো ঈদের পরের দিন থেকে এখনো রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় রয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকেই বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ল করা গেছে। বিকেল বেলায় সেই উপস্থিতি শহর ফাঁকার কথা যেন ভুলিয়ে দিয়েছে নাগরিক মনকে। বিনোদনের বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলোতে মানুষের ভিড় থাকলেও শহর ছিল ফ^াকা। এই ফাঁকা শহরেও সবাই নিরাপদেই ঘুরতে পারছেন।
মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে শাহবাগের শিশুপার্কে ঘুরতে এসেছেন আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে শাহবাগে পৌঁছেছেন। শিশুদের নিয়ে এমন জ্যামহীন রাস্তায় ঘুরতে বেশ আনন্দ ও নিরাপদ বোধ করছেন। রাজধানীর হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা উত্তরার এক দম্পতি জানান, মাত্র ৩০ মিনিটে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টর থেকে হাতিরঝিল আসেন। অন্য সময় দুই ঘণ্টার বেশি লাগে। বরাবরের মতো ঈদের পরের দিন মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা, রমনায় শিশুপার্ক, বিজয় সরণির নভোথিয়েটারে দেখা গেছে মানুষের ঢল। ঈদের এই ছুটিতে ঢাকা হারিয়েছে চিরায়ত চেহারা। ফাঁকা এই শহরে অনেকেই একঘেয়ে হয়ে উঠছেন, তারা পরিবার পরিজন নিয়ে এখনই বেরিয়ে পড়তে পারেন। উপভোগ করতে যেতে পারেন ঢাকার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। বিনোদনকেন্দ্র গুলো নগরবাসীর জন্য বিনোদনের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। আবার প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে যেতে পারেন ঢাকার বিভিন্ন পার্কে। আর নির্মল বিনোদনের জন্য আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক, সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন।
ঈদের সময় ঢাকা চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এবারো দর্শনার্থীর ঢল নামে চিড়িয়াখানায়। প্রতিদিনের মতোই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকছে চিড়িয়াখানা। চাইলে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক। ঈদ উপলে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে পার্কটি। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে পার্ক। ঈদে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে প্রবেশ ও রাইডে চড়ার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে শিশুপার্ক কর্তৃপ।
শিশুমেলা অবস্থিত রাজধানীর শ্যামলীতে। এতে রয়েছে ৪০টির মতো রাইড। পরিবারের সবার চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকছে।
পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত এটি। মোগল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থলও এটি। পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে পরী বিবির মাজার। এখানে আছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা। আছে শাহি মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি।
শানবাঁধানো নদীর ঘাটে নৌকা বাঁধা দেখতে যেতে হবে বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে চাইলে এখানে নৌকায় করে ঘুরতে পারেন। জায়গাটি গাছগাছালিতে ঢাকা। গাছের সারির ফাঁকে পাকা রাস্তা। শহরের কোলাহল ছেড়ে রাজধানীর উপকণ্ঠ শ্যামপুরে প্রায় সাত একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে পার্কটি।
নামে হয়তো আহছান মঞ্জিলকে অনেকেই জানেন। কিন্তু পুরান ঢাকার যানজটের কথা চিন্তা করে অনেকেই ওদিকে পা বাড়ান না। তবে এই ফাঁকা ঢাকায় একবার ঢুঁ মারতে পারেন আহসান মঞ্জিলে। ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয় ফ্যান্টাসি কিংডম। বাংলাদেশের থিমপার্কগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি কিংডম। আশুলিয়ায় গড়ে ওঠা এই বিনোদনকেন্দ্র সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। বড়দের প্রবেশমূল্য ৪০০ টাকা। তিন ফুটের নিচে শিশুদের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না। যারা সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে রয়েছে ওয়াটার কিংডম।
নানা রকম রাইড আর ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি খুদে চিড়িয়াখানা বলা হয় নন্দন পার্ককে। সাভারের নবীনগর রাস্তা ধরে জিরানীর পর অবস্থিত নন্দন পার্ক। ছুটির দিনেও এটি খোলা থাকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক ঢাকার সায়েদাবাদ লেভেল ক্রসিংয়ের পাশে অবস্থিত। খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এখানে রাইডের মধ্যে রয়েছে ফাওয়ার কাপ, মিনি ক্যাব, বেবি কার, টয় ট্রেন, ভয়েজার বোর্ড, টুইস্টার, সুপার চেয়ার, মেরি-গো-রাউন্ড, ওয়ান্ডারল্যান্ড হুইল ইত্যাদি।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের আট তলায় উঠতেই দেখা গেল ভিন্ন এক শিশুরাজ্য। অসংখ্য শিশু-কিশোরের প্রাণোচ্ছল উপস্থিতি, আনন্দমুখর উচ্ছ্বাস। কেউ চেপে বসছে ঘোড়ার পিঠে, কেউ নাগরদোলায়, কেউ বাম্পার কারে। আনন্দের নানা রাইড ও খেলার সরঞ্জাম চারদিকে। শিশুদের নির্মল আনন্দে মেতে উঠেছে রাজধানীর বৃহত্তম ইনডোর থিম পার্ক টগি ওয়ার্ল্ড। গতকাল ঈদের ছুটিতে নানা বয়সের শিশু ও তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে গমগম করছে গোটা পার্ক। বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৮ ও ৯-এ প্রায় ৩৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুুুুটি বিশাল ফোর নিয়ে সাজানো টগি ওয়ার্ল্ড পার্ক।
এখানে রয়েছে জাইরোস্কোপ, মিনি টাওয়ার, বাম্পার কার, লিটল প্লেনসহ মোট ১৫টি আকর্ষণীয় রাইড, ৪৩টি গেমস এবং কিডস ও ভিআইপি বোলিং। এ ছাড়া আছে ৫০টি শিশু-কিশোর ধারণমতার একটি পার্টি রুম। পার্কে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা। এ ছাড়া ঈদ উপলে রয়েছে নানা প্যাকেজ অফার। রোব থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
যারা প্রকৃতিপ্রেমী বা প্রকৃতির কাছাকছি থাকতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে হাতিরঝিল। এই ব্যস্ত শহরে হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদনকেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কেউই ঘুরে আসতে পারেন হাতিরঝিল। সন্ধ্যা হলেই বেশি জমে ওঠে এই এলাকা। পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখতে এখানে আরামদায়ক বাস সার্ভিসও রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement